
আলোচনা
নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তাঁর সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩,০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এত বেশি সংখ্যক গান রচনার উদাহরণ নেই। এসকল গানের বড় একটি অংশ তাঁরই সুরারোপিত। তাঁর রচিত চল্ চল্ চল্, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তাঁর কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ও জনপ্রিয়তা
নজরুলের আবির্ভাব ও কর্মকাল রবীন্দ্রযুগের অন্তর্ভূত। তবু নজরুল রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বলয়ের সম্পূর্ণ বাইরে থেকে গীত রচনা করেছেন ও সুরারোপ করেছেন। তিনি বাংলা গানে বিচিত্র সুরের উৎস। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনিও একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও সুগায়ক। গানের সংখ্যায় তিনি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি বহু নতুন সুরের স্রষ্টা। বিচিত্র সুর আর তালে তার গান নিত্য নতুন।
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি তন্দ্রাতে বিলোল।।
আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশি-দিন
আসেনি দখনে হাওয়া গজল গাওয়া মোমাছি বিভোল।।
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি’, আসবে বাহিরে (রে)
শিশিরের স্পর্শ-সুখে ভাঙবে রে ঘুম রাঙবে রে কপোল।
ফাগুনের মুকুল-জাগা দু’কূল ভাঙা আসবে ফুলেল বান
কুঁড়িদের ওষ্ঠ পুটে লুটবে হাসি ফুটবে গালে টোল।।
কবি তুই গন্ধে ভুলে ‘ ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর
ফুলে তোর বুক ভ’রেছিস আজকে জলে ভররে আঁখির কোল।।
নজরুল ” নজরুলগীতি ” শিখাচ্ছেন
শ্রোতার পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় নজরুলের কারার ওই লৌহকপাট গানটি ১৬তম স্থানে এবং চল্ চল্ চল্ ঊর্ধগগনে বাজে মাদল গানটি ১৮তম স্থানে রয়েছে।